Skip to content

ইউনূসমিতি ১

May 28, 2013

২০ অক্টোবর ২০০৮, সোমবার

বাঁচায় ঋণ, মারে কিস্তি।

http://nirmaaan.com/blog/masudkarim/822

===============

২০ অক্টোবর ২০১০, বুধবার

সামাজিক কার্যকলাপের পাশাপাশি আরেকটি শব্দ সব সময় শোনা যায় অসামাজিক কার্যকলাপ। এক্ষেত্রেও কি তাই হবে ইউনুস করেন সামাজিক ব্যবসা আর জগৎসুদ্ধ লোক করেন অসামাজিক ব্যবসা? social business-এর মাধ্যমে ইউনুস কী বোঝাতে চাইছেন, তার অভিপ্রায় সমাজতান্ত্রিক ব্যবসা বোঝানো নয় তো? আসলে ইউনুস কখনোই তত্ত্ব বোঝাতে ও প্রকাশ করতে পারেননি, তাই অনেক বছর তার নাম অর্থনীতি নিয়ে শোনা গেলেও তিনি তার প্রাণভোমরা ‘নোবেল’ শান্তিতে পেয়েছেন। আমরা জানি আরো হাজার হাজার বই লিখলেও তিনি কোনোদিন ‘শক্তি দই’ কেন social business এটা প্রকাশ করতে পারবেন না। কারণ সেই মুরোদ তার নেই তা এতদিনে পরিস্কার হয়ে গেছে। আসল ব্যাপার হল ‘ক্ষুদ্র ঋণ’ -এর মূল চাবি ইউনুস-এর হাতছাড়া হয়ে গেছে অনেক দিন, বাংলাদেশে এখন অন্য আরো অনেক প্রতিষ্ঠান তার চেয়ে অনেক বেশি ‘ক্ষুদ্র ঋণ’ বিতরণ করে, তাই আগের মতো ‘ক্ষুদ্র ঋণ’-এর নামে বিদেশি ‘ঋণ বিনিয়োগ’ বাণিজ্যে তার আধিপত্য হারিয়ে তিনি একটি নতুন পন্থা বের করেছেন ‘সামাজিক ব্যবসা’য় বিনিয়োগ। সেই ‘সামাজিক ব্যবসা’ অন্যসব ‘অসামাজিক ব্যবসা’ থেকে অনেক উন্নত, সেখানে ব্যবসাটা শুধু লাভভিত্তিক নয়, সমাজের প্রগতিভিত্তিক অনেকটা ‘সমাজতান্ত্রিক ব্যবসা’। যেমন welfare state-কে বলা হত প্রায় socialist state। ইউনুস এক গোলকধাঁধার নাম, যাকে আমাদের চেয়ে পশ্চিমের এজেন্ডাগ্রস্ত শান্তিকামী বিনিয়োগকারীরা অনেক ভাল বুঝতে পারেন। সেই গর্বে তার জীবনের পা উড়ে উড়ে চলে তো চলুক।

============

২৯ অক্টোবর ২০১০, শুক্রবার

সাধারণ ব্যবসায় কার কার স্বার্থ থাকে? — ১. বিনিয়োগকারী ২. কর্মচারী ৩. ভোক্তা ৪. যাবতীয় রাজস্ব প্রতিষ্ঠান বা আরো বড় অর্থে সরকার।

তাহলে সামজিক ব্যবসায় কার কার স্বার্থ থাকবে?– অবশ্যই ওই চারটি স্বার্থের বাইরে সামাজিক সমস্যাগুলোর একটা স্বার্থ থাকবে। খুব সহজে আমি এটাই বুঝতে চেষ্টা করছি। আমাদের এখন জানতে হবে আমাদের সামনে কী কী সামাজিক ব্যবসা এর মধ্যে শুরু হয়েছে ও হবে।

গ্রামীণ ড্যানোনের শক্তি দই উৎপাদন সামাজিক ব্যবসার একটি বড় উদাহরণ বলে অভিমত দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে বিশ্বের নামকরা প্রতিষ্ঠানের যৌথভাবে সামাজিক ব্যবসার উদ্যোগ শুরু করার কথা জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক সেবিকা (নার্স) রয়েছেন। ইতিমধ্যে তাঁর প্রতিষ্ঠান একটি নার্স কলেজ স্থাপন করেছে। আরও ১৩টি নার্স কলেজ স্থাপন করা হবে। নার্স তৈরির মাধ্যমে চিকিৎসা খাতে নার্সিং সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগও একটি সামাজিক ব্যবসা। এ ছাড়া কেমিক্যাল কোম্পানি বিএএসএফের সহায়তায় বিশেষ ধরনের মশারি তৈরির উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বখ্যাত পাদুকা প্রস্তুতকারী কোম্পানি অ্যাডিডাসের সঙ্গে জুতার ব্যবসা শুরুর বিষয়টি আলোচনা চলছে বলে ড. ইউনূস জানান।

সূত্র : সামাজিক ব্যবসা সব সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে পারে: ড. ইউনূস
তাহলে আমরা এখন থেকে সবাই মিলে জানতে চেষ্টা করব তার উল্লেখিত এই ব্যবসাগুলোর গতিপ্রকৃতি। আজো ‘শক্তিদই’ নিয়ে প্রচলিত মিডিয়াতে এর উদ্বোধন ছাড়া তেমন বড় কিছু আমরা জানতে পারিনি। হয়তো প্রচলিত মিডিয়া আমাদের এ নতুন বিষয়টি নিয়ে ঠিক মতো জানাতে পারছে না, কিন্তু এখন থেকে আমরা চেষ্টা করব কোনো ছোট সূত্র পেলেও এ সম্বন্ধে জানতে। আর ইউনূস সাহেবেরও উচিত হবে আমাদের মিডিয়াকে সামনে কী কী হবে এর চেয়ে শক্তি দই ও নার্স প্রকল্প নিয়ে নিচের বিষয়গুলো পরিস্কার করা :
১. বিনিয়োগকারীর স্বার্থ : আমরা বুঝতে পারছি বিনিয়োগকারী শুধু তার বিনিয়োগকৃত অর্থ ১/৫/১০/৩০… বছর পর যখনই তুলতে চান ফেরত পাবেন। অর্থাৎ ১০০০ টাকা বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীর স্বার্থ শুধু ১০০০ টাকা ফেরত পাওয়া এবং মুনাফা হিসাবে এটা জানা যে তার বিনিয়োগের ফলে এই এই সামাজিক সমস্যার সমাধান হয়েছে। সামাজিক ব্যবসায় ক্ষতি হলে কী হবে? নাকি সামাজিক ব্যবসায় ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা নেই, যেমন ক্ষুদ্রঋণ ব্যবসায় কোনো ক্ষতি হয় না।
২. কর্মচারীর স্বার্থ : তার বেতন ও সব ধরণের নিশ্চয়তা নিয়ে ইউনূস সবসময়ে উচ্চকণ্ঠ। তিনি সামাজিক ব্যবসার কর্মচারীদের ইউনিয়ন করতে দেবেন কি?
৩. ভোক্তার স্বার্থ : কারা কেনেন শক্তি দই? তিনি কি শক্তি দই-এর দাম/গুণ বিবেচনায় সন্তুষ্ট?
৪. সরকারের স্বার্থ : এই ব্যবসা থেকে সরকার কি রাজস্ব পাবেন? পেলে কি কি খাতে? এটা জানানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৫. সামাজিক সমস্যার স্বার্থ : এবিষয়ে আরো আরো বেশি তথ্য পরিসংখ্যান নির্ভর লেখা মিডিয়ায় আসা উচিত ইউনূস থেকে। কারণ যেহেতু সামাজিক ব্যবসার প্রায়োগিক কিছু ক্ষেত্র এখন প্রস্তুত সেই ভাতগুলো এখন টিপে দেখানোই হওয়া উচিত ইউনূসের এখন একমাত্র কাজ।

@ ডঃ সামিম উল মওলা ইউনূস ব্যক্তি মানুষ কীরকম তা জানার আমার অন্তত কোনো উৎসাহ নেই। তিনি সামাজিক ব্যবসা হিসাবে ‘একটি নার্স কলেজ’ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন, আপনার দ্বারা কি সম্ভব এই সামাজিক ব্যবসাটা কিভাবে চলে তার একটা ধারণা আমাদেরকে দেয়া?

গ্রামীণ ব্যাংক, গ্রামীণ ফোন কিন্তু সামাজিক ব্যবসার মডেল নয়। এর একটি ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা এবং অন্যটি প্রচলিত কর্পোরেট ব্যবসা। কাজেই ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আশা করি কেউ এদুটি ব্যবসা নিয়ে কথা বলবেন না। তার অন্যান্য ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে অবশ্যই এদুটি নিয়ে বলতে পারেন।

====================

২ নভেম্বর ২০১০, মঙ্গলবার

গ্রামীণ ব্যাংক, গ্রামীণ ফোন কিন্তু সামাজিক ব্যবসার মডেল নয়। এর একটি ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা এবং অন্যটি প্রচলিত কর্পোরেট ব্যবসা।

না, গ্রামীণ ব্যাংক সম্বন্ধে যা জানতাম তা ঠিক নয়। বলা হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক সামাজিক ব্যবসার মা।

The Grameen Bank is the first social business. Interestingly, it gives the poor not only access to capital, but allows them to be the owners of the bank and thereby benefit from any dividend payments.

বিস্তারিত পড়ুন এখানে

তার মানে সামাজিক ব্যবসা নতুন কোনো কথা নয়, তাহলে সামাজিক ব্যবসার কথা নোবেল এর আগে কেন শুনলাম না। আমরা অজ্ঞ! সত্যিই অজ্ঞ! আমাদের আর কিছু হবে না!

====================

৪ মার্চ ২০১১, শুক্রবার

যেটুকু সুদ নেয়া হয় সেটা হচ্ছে অর্থায়নের খরচ নির্বাহ করার জন্য।

এই মন্তব্যটি আগে ঠিক মতো খেয়াল করা হয়নি। অর্থায়নের খরচ নির্বাহ এর জন্য তো processing fee বা service charge আছেই, যেকোনো ক্ষুদ্র বা বৃহৎ ঋণে এটি সুদের চেয়ে আলাদা করেই নেয়া হয়। বৃহৎ বা এসএমই ঋণে processing fee বা service charge ঋণ দেয়ার সময়েই নিয়ে ফেলা হয় আর ক্ষুদ্র ঋণে processing fee বা service charge সুদের সাথে যোগ করে নেয়া হয়। এবং ক্ষুদ্র ঋণের processing fee বা service chargeটাই একটা বড় সমস্যা কারণ বৃহৎ বা এসএমই ঋণের চেয়ে ক্ষুদ্র ঋণে এটা অনেক বেশি, কারণ খুব সহজ ঋণ ১০ টাকা হোক বা ১০০০টাকা হোক প্রতিটি ঋণের জন্যই একটা ফাইল চালাতে হয় এবং কাজের স্বাভাবিক ধরণ অনুযায়ী ওই একটা ফাইল চালাতে টাকার সংখ্যা যাই হোক না কেন নির্বাহী খরচ প্রায় সমান। তার উপর processing fee বা service chargeটা এককালীন না নিয়ে যখন একেও কিস্তিতে রূপান্তরিত করা হয় তখন কিস্তি নির্ধারণের স্বাভাবিক চক্রবৃদ্ধি নিয়মে ক্ষুদ্র ঋণের গ্রাহককে ওই বেশির চেয়ে আরো বেশি পরিশোধ করতে হয়।

ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ঠিক এইজায়গাটাতে নিয়মিত কাজ হওয়া উচিত, processing fee বা service charge এর দৈত্যটাকে কত আরো গ্রাহক বান্ধব করা যায় এর জন্য অর্থনীতি ও অর্থসংস্থানবিদ্যার আরো কী কী টুল ব্যবহার করা যায় এনিয়ে নিয়মতান্ত্রিক সার্বক্ষণিক কাজের জন্য সবার আগে ইউনূসেরই উদ্যোগী হওয়া উচিত ছিল, এবং গ্রামীণ ব্যাংকের দ্বিতীয় না হলেও তৃতীয় দশকের শুরুতে তারই একাজ করা উচিত ছিল — কিন্তু তিনি তা করেননি, এর মধ্যে আবার নোবেল পেয়ে স্বাবাবিকভাবে তার দুনিয়ার সময় যত বেড়েছে দেশের সময় তত কমেছে, ফলে ‘গ্রামীণ ব্যাংক’কে সবল করতে বা যে ক্ষুদ্র ঋণকে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন তাকে আরো গ্রাহকবান্ধব করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। জানি না ‘গ্রামীণ ব্যাংক’এর ভবিষ্যৎ কীহবে বা বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ঋণের গ্রাহকবান্ধবতা আরো বাড়বে কিনা, কিন্তু এটা জানি এই অর্থনৈতিক ও অর্থসংস্থানবিদ্যার ফলিত উৎপাদন ‘ক্ষুদ্র ঋণ’কে ঠিক মতে চালাতে ব্যর্থ হলে এমন একটা বিকট মন্দায় আমরা আক্রান্ত হব যেমন্দার কোনো ধারণা করা এখনই আমাদের দ্বারা সম্ভব না হলেও ‘ক্ষুদ্র ঋণের জাল’এর ব্যপকতা চিন্তা করে সেই মহামন্দার কল্পনা কারো জন্যই কঠিন নয়।

=======================

৬ সেপ্টেম্বর ২০১২, বৃহস্পতিবার

একথা

A social business is a non-loss, non-dividend company

এবং একথা

The Grameen Bank is the first social business.

পড়ে সবকিছুর পরও এই আস্থাটা ছিল, আচ্ছা গ্রামীণ ব্যাংকই প্রথম সামাজিক ব্যবসা — এই ব্যবসায় ক্ষতি নেই ডিভিডেন্ড নেই। কিন্তু এখন ইউনূস সেন্টার বলছে গ্রামীণ ব্যাংক শেয়ার হোল্ডারদের ডিভিডেন্ড দেয়। কী যাদু করিলা কী সামাজিক ব্যবসা শিখাইলা!

০৫. প্রশ্নঃ যদি শেয়ারহোল্ডার থেকে থাকে, তবে কোনদিন তাদেরকে ডিভিডেন্ড দেয়া হলো না কেন? মুনাফার টাকা কি প্রফেসর ইউনূস এবং তার সঙ্গী-সাথীরা তাহলে হজম করে ফেলেছেন?

উত্তরঃ গ্রামীণ ব্যাংক বরাবর শেয়ারহোল্ডারের ডিভিডেন্ড দিয়ে এসেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রত্যেক সদস্য যেকোন সময় ১০০ টাকা দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের একটি শেয়ার কিনতে পারেন। ৮৪ লক্ষ ঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে ৫৫ লক্ষ ঋণ গ্রহীতা এ পর্যন্ত শেয়ার কিনেছেন। এর মাধ্যমে তারা ৫৫ কোটি টাকার শেয়ার কিনে ৯৭ শতাংশ মূলধনের মালিক হয়েছেন। সরকার ও সরকারি ব্যাংক ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার শেয়ার কিনে ৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক।

এপর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংক সরকারকে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার শেয়ারের বিনিময়ে ২ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা, সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংককে প্রত্যেকে ৩০ লক্ষ টাকার শেয়ারের বিনিময়ে ৬৩ লক্ষ টাকা লভ্যাংশ দিয়েছে।

সদস্যরা ৫৫ কোটি টাকার শেয়ারের বিনিময়ে ৭৭ কোটি টাকা লভ্যাংশ পেয়েছেন (সদস্যরা তুলনামূলকভাবে কম পেয়েছেন, যেহেতু ২০০৬ সালের পরবর্তী সময়ে যারা শেয়ার কিনেছেন তারা অপেক্ষাকৃত কম সময়ের মেয়াদে লভ্যাংশ পেয়েছেন)। প্রত্যেক সদস্যকে প্রতি বছর লভ্যাংশ তার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।

=========================

১ ডিসেম্বর ২০১০, বুধবার

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে আসা নথিপত্রে দেখা গেছে, দারিদ্র্য দূর করার জন্য ভর্তুকি হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংককে ১৯৯৬ সালে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেয় ইউরোপের কয়েকটি দেশ। নরওয়ে, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানির দেওয়া অর্থ থেকে ১০ কোটি ডলারেরও বেশি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীণ কল্যাণ নামে নিজের অন্য এক প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেন ইউনূস।

লাভহীন গল্পের লাভের খাল কীকরে কাটতে হবে তাই কি শেখাচ্ছেন সামাজিক ব্যবসার প্রবক্তা?

বিস্তারিত পড়ুন এখানে

===================

২৬ ডিসেম্বর ২০১০, রবিবার

গতকাল রবিবার রাজধানীর মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। গ্রামীণ ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরজাহান বেগম ও মহাব্যবস্থাপক এম শাহজাহানসহ প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এই লিখিত বক্তব্যের পূর্ণ বিবরণী কারো কোথাও চোখে পড়েছে? আমি কালের কণ্ঠে দুঃখ পেয়েছি লড়াই করতে চাই না : ড. ইউনূস পড়লাম এরপর আরো কয়েকটি পত্রিকায় লিখিত বক্তব্যটি পাওয়া যায় কিনা খুঁজলাম। পেলাম না, সব পত্রিকাতেই উদ্ধৃতি দিয়ে ইউনূসের বক্তব্য জানানো হয়েছে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে পঠিত পূর্ণাঙ্গ লিখিত বক্তব্যটি পড়বার প্রয়োজন ছিল। এই লিখিত বক্তব্যের হদিস কারো জানা থাকলে এখানে মন্তব্য আকারে তুলে দিতে পারেন।

=======================

১৭ জানুয়ারি ২০১১, সোমবার

ফান্ডের পরিচালক ও উপমহাব্যবস্থাপক কাজী সুলতান আহমেদ বলেন, ‘কারখানায় লাভ না হলে তো রফিককে বেতন দিতে পারি না।’

এই ‘গ্রামীণ ফান্ড’ প্রতিষ্ঠানটি কি সামাজিক ব্যবসা না অসামাজিক ব্যবসা। যদি অসামাজিক ব্যবসা হয় তাহলে কোনো কথা নাই, আর যদি সামাজিক ব্যবসা হয় তাহলে দুইখান কথা আছে — ব্যবসাটা কার জন্য সামাজিক, রফিকের জন্য না ফান্ডের জন্য? যদি রফিকের জন্য হয় তাহলে কোনো কথা নাই, আর যদি ফান্ডের জন্য হয় তাহলে…

গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি ড. ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয় না।

ইউনূস মহোদয় কি মৌনব্রত নিলেন? তিনি কথা বলেন না কেন?

==============

২ মার্চ ২০১১, বুধবার

গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইউনূসকে অপসারণ করা হয়েছে।

নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে যাবেন।

বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক চিঠিতে ইউনূসের অপসারনের কথা জানানো হয়। এতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নজরুল হুদা ।

চিঠিতে ড. ইউনূসকে অপসারণ করার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ১৯৮২ সালের গ্রামীণব্যাংক অধ্যাদেশ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কোম্পানি আইন অনুযায়ী ৬০ বছর পার হওয়ার পর ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কেউ থাকতে পারেন না। থাকলেও তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু ড. ইউনূস তার বয়স ৬০ বছর পার হওয়ার পরও এব্যাপারে কোনো অনুমোদন নেননি।

অর্থমন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায় বৃহস্পতিবার সকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার সচিবালয় কার্যালয়ে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন।

এদিকে, ড. ইউনূস এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই মধ্যে তার আইনজীবীরা এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে বাংলানউজকে জানায় সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।

এদিকে ডক্টর ইউনূসকে অপসারণের সিদ্ধান্তটি এরই মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও সংস্থার কূটনীতিক ও প্রতিনিধিদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ভারত, চীন, ইউইউ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা এ তালিকায় রয়েছে।

খবরের লিন্ক এখানে

====================

৩ মার্চ ২০১১, বৃহস্পতিবার

ইউনূসের অপসারণ এখনো খবরের পর্যায়ে আছে, এর পরিণতির দিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, ক্ষুদ্রঋণকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে বিখ্যাত হয়েছেন ইউনূস — প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে গিয়ে যেপ্রতিষ্ঠানটি গড়েছেন প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেই ‘গ্রামীণ ব্যাংক’কে ঠিকমতো সংগঠিত করতে হয়ত পারেননি ইউনূস, অথবা সংগঠিত করতে চাননি। ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ তো খাতুনগঞ্জমার্কা লিমিটেড কোম্পানি নয়, রীতিমতো এক বৃহৎ বিখ্যাত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সেই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ বা আজীবন নিয়োগ শুধু অফিসের ফাইলে নয় জাতীয় দৈনিকগুলোতেও খবর হবে এটাই তো নিয়ম। এত কথা না বলে ইউনূস সেরকম একটা রেফারেন্স কেন দিতে পারছেন না যে তমুক তারিখের তমুক পত্রিকায় দেখুন আমি ‘গ্রামীণ ব্যাংক’এর পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে আজীবনের জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ পেয়েছি এবং পরিচালনা পর্ষদের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক তমুক দিন তমুক আদেশ বলে কার্যকর করেছে। এবং এই রেফারেন্সগুলো তো একটা সাধারণ ব্যাংকের সাধারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাধারণভাবে তাৎক্ষণিকভাবেই দিতে পারে, তাহলে অসাধারণ ইউনূসের এই অবস্থা কেন? একটা অতিসাধারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ বিতর্কে তাকে একেবারে হাইকোর্টে কেন যেতে হচ্ছে? তাহলে কি এটা বুঝতে হবে অসাধারণ হতে গেলে এরকমই হতে হবে? নাকি এটা বুঝতে হবে ‘গ্রামীণ ব্যাংক’এর পরিচালনা পর্ষদ বলে যা আছে বা ছিল তার কোনো কার্যকারিতা কখনো ছিল না? — অনেকটা আমাদের একান্ত পারিবারিক লিমিটেড কোম্পানিগুলোর মতো? খুবই দুঃখজনক যে ‘গ্রামীণ ব্যাংক’এর মতো একটা সুবৃহৎ পাবলিক প্রতিষ্ঠান এরকমভাবে চলছে!
নাকি নোবেল পাওয়ার পর তিনি ভেবেছেন এই শাক দিয়ে তিনি এবার তার সাথে সংশ্লিষ্ট সব মাছ একে একে ঢেকে দেবেন

=================

৩ মার্চ ২০১১, বৃহস্পতিবার

নিদ্রা ভাল, তারচেয়ে ভাল শীতের নিদ্রা। ৬০, ৭০ নিয়ে খুব কথা হচ্ছে। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা সরকারের শেয়ার ৭৫ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ কিভাবে হল, এ বিষয়ে অর্থাৎ ৭৫,২৫ নিয়ে আলোচনা হওয়া সবচেয়ে জরুরি। আমি নিজে এবিষয়ে এখনো কিছু জানি না, আজ থেকে খুঁজতে শুরু করব, আর কেউ জানলে তো আশা করি এই মন্তব্যের ঘরেই তা জানতে পারব।

====================

৬ মার্চ ২০১১, রবিবার

গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের শেয়ার কত? কেউ বলছেন ২৫%, কেউ ৬%, কেউ ৩.৫%। গ্রামীণ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে পেলাম

Today Grameen Bank is owned by the rural poor whom it serves. Borrowers of the Bank own 90% of its shares, while the remaining 10% is owned by the government.

লিন্ক এখানে

কিন্তু সরকারের সব শেয়ার আবার সরকারের নয়, ২০০৬-এর এক হিসাব থেকে পাওয়া যায় : ব্যাংকের ৩১.৮ কোটি পরিশোধিত মূলধনের ৩০ কোটি গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের, ১.২ কোটি বাংলাদেশ সরকারের, ৩০ লাখ সোনালী ব্যাংকের ও ৩০ লাখ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। তাহলে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের ৯৪.৩৩%, বাংলাদেশ সরকারের ৩.৭৭% এবং সোনালি ব্যাংক ও কৃষিব্যাংক উভয়ের .৯৫% করে — এই ছিল ২০০৬ সালের শেয়ারের ভাগাভাগি, এ অনুযায়ী সরকার ও সরকারী দুই ব্যাংক মিলে শেয়ার প্রায় ৬%। লিন্ক এখানে। এর অর্থ হল গ্রামীণ ব্যাংক প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী ২০০৬-এর পরে গ্রামীণ ব্যাংকে সরকার ও সরকারী দুই ব্যাংকের অংশীদারিত্ব প্রায় ৬% থেকে বেড়ে ১০% হয়েছে।

কিন্তু ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক কত পরিশোধিত মূলধন নিয়ে কোম্পানিটি শুরু করেছে এবং তখন সেই পরিশোধিত মূলধনে কার কত ভাগ ছিল তার কোনো হিসাব আমি এখনো গ্রামীণ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে খুঁজে পাইনি বা অন্য কোনো মাধ্যম থেকেও সংগ্রহ করতে পারিনি। শুধু গ্রামীণ ব্যাংকের ওয়েব সাইটে এখানে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত পুরশোধিত মূলধন পাওয়া যাচ্ছে, যেমন ১৯৯৭ সালে পরিশোধিত মূলধন ছিল ২৪.৬ কোটি — ২০০০ সালে ২৭ কোটি, এরকম একযুগের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ জানা গেলেও ভাগাভাগিটা জানা যাচ্ছে না। কাজেই ১৯৮৩ সালে সরকার কত দিয়ে শুরু করেছিল এবং এখন যেখানে এসেছে এবং কিভাবে এসেছে তার কোনো চিত্র আমরা ঠিক পাচ্ছি না। এক্ষেত্রে আমরা অন্ধকারেই আছি এবং এর জন্য সরকার ও গ্রামীণ ব্যাংক উভয়েই দায়ী অথবা দায়ী আমি হয়ত আমি পুরোপুরি ব্যাপরটি বের করতে পারিনি।

========================

৪ মার্চ ২০১১, শুক্রবার

বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতেরা সাধারণত মধ্যমমানের কূটনীতিবিদ হন

কিন্তু মারিয়ার্টি মধ্যম মানের নয়, তার মান এরও নিচে। এর প্রমাণ সাংবাদিকদেরকে বলা তার এই কথা

Moriarty said, “It strikes us. It is an unusual way to handle a Nobel laureate, who is considered outside the country as one of the greatest Bangladeshis.”

নোবেল কমিটি তার এই ভক্তকে দিয়ে এই দেশে দ্বিতীয় ব্লাসফেমি আইন আনবেন কিনা? প্রথমত হযরতের অবমাননা করা যাবে না, দ্বিতীয়ত Nobel laureate-এর অবমাননা করা যাবে না। জীবনানন্দের বাক্যে : মারিয়ার্টি গাড়লের মতো গেল কেশে

====================

৫ মার্চ ২০১১, শনিবার

ক্ষুদ্রঋণের আলোচনা শুধু গ্রামীণ ব্যাংকের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে আমাদের এই সরকারী প্রতিষ্ঠানটির দিকে মনে হয় নজর দেয়া উচিত, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন বা সংক্ষেপে পিকেএসএফ — নীরবে নিভৃতে এই প্রতিষ্ঠান ২০ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণের একটা বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ এখন এই প্রতিষ্ঠানের হাতে, আজই প্রথম আমি এই প্রতিষ্ঠানটি সম্বন্ধে জেনেছি। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট : http://www.pksf-bd.org

==============

৭ মার্চ ২০১১, সোমবার

অনুরাগ বেহার মনে করেন সামাজিক ব্যবসার মন নিয়ে লিখতে হলে উপন্যাসই লিখতে হয়, কিন্তু তিনি লিখছেন কলাম এবং সেই কলামে কিছু হলেও বলতে পেরেছেন তিনি এই মনের কথা। বিশেষত সামাজিক ব্যবসার পণ্যের মূল্যনির্ধারণ কিকরে হবে?

When deciding pricing, should they price such that they just cover their costs and investment needs, or should they price to the maximum that the market can bear? Should they share their intellectual property freely or should they “price” it? Should they raise private capital or depend on public funding?

I have seen them struggle with what takes priority—profit or purpose. The founder(s) sometimes maintain a fine balance, but often even they are unclear. Sometimes the conflict is not apparent, and the unconscious brush it aside.

As their organizations grow, this conflict becomes sharper and more frequent. And in such larger enterprises, as more people get involved in these key decisions, the balance between purpose and profits sometimes loses relevance.

The even more intriguing human journeys are those of founder(s), who start with “purpose first”, but along the way drift to “profit first”, without realizing the pass that they have come to, believing that they are serving the purpose through profit. As I said earlier, this is the stuff that needs a contemplative novel—not a newspaper column. It’s a matter of hearts and minds of men, which often the individual in question also does not know.

বিস্তারিত পড়ুন এখানে

======================

১৩ জুন ২০১২, বুধবার

বয়স হলে কি মানুষের ফিকশনের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে? ইউনূস কেমন ফিকশনের দিকে ঝুঁকেছেন, তরুণ তরুণীদের সামাজিক ফিকশন লিখতে বলেছেন ইউনূস। সামাজিক ফিকশন, ওফ, কালে কালে আরো কত যে দেখব!

=================

২ জুলাই ২০১২, সোমবার

সামাজিক ফিকশন চলুক। পরে এই সামাজিক ফিকশনগুলো থেকে বেছে সামজিক ছবি বানানোর উদ্যোগও নিতে হবে।

[http://nirmaaan.com/blog/nur-nobi-dulal/6119 সূত্র]

5 Comments
  1. PM slams Muhith for remarks on microcredit

    Prime Minister Sheikh Hasina criticised on Saturday her cabinet member AMA Muhith for praising the role of microcredit and Dr Muhammad Yunus in eradicating the country’s poverty, reports UNB.

    “A couple of days back, our Finance Minister highly praised microcredit and said poverty eradication has been done successfully due to microcredit. If poverty has been reduced for him (Dr Muhammad Yunus) then why the poverty rate was 60 per cent and reduced to 22 per cent now,” she said.

    The Prime Minister was speaking at the national council of Bangladesh Mahila Awami League at Krishibid Institution, Bangladesh (KIB).

    She said, “I’ll request the honorable finance minister to take the statistics during which regime poverty has been reduced. This is, of course, during the Awami League regime. It came down due to steps taken by the AL government where the finance minister was involved.”

    During the 1996-2001 rule, the Prime Minister said, then finance minister SAMS Kibria was involved. “As a result, the poverty has reduced.”

    During the BNP’s rule and caretaker governments the poverty reduction pace got stalled, she said adding that as it was nourished through microcredit while the microcredit lenders accumulated wealth.

    Hasina said the hard-earned money of the rural women is used for repaying the high interest rate of the microcredit. “They live from hand to mouth, but cannot come out from the poverty, and those who do the microcredit business don’t want poor people to come out of poverty cycle as it’ll stop their business.”

    She said the main aim of her government is to remove poverty from the country. “It’s a matter of regret that he (Finance Minister Muhith) praised such a man who stopped the World Bank from financing the Padma Bridge project… I had been threatened repeatedly by the USA. But he highly appreciated that person,” Hasina said.

    The Prime Minister said she is there in politics to improve the fate of the country’s common people, not to do business with them.

    Earlier on March 02, Finance Minister AMA Muhith praised Nobel Laureate Prof Muhammad Yunus and Brac founder Fazle Hasan Abed for their pioneering efforts to eradicate poverty from the country.

    “They (Yunus and Abed) are revered personalities. We should respect them,” he said while speaking at a function titled ‘Modernisation of Loan Management System’ at LGED auditorium in Agargaon.

    Muhith said the initiatives of Prof Yunus and Sir Abed started on a very small scale but over the years they transformed those initiatives into institutions.

    “I think these two projects [Grameen Bank and Brac] exhibited the country’s success in poverty alleviation,” Muhith said adding that they have helped people thrive on their hidden talents.

    http://print.thefinancialexpress-bd.com/2017/03/05/166415

    মুহিতের সমালোচনায় হাসিনা

    দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনায় পড়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

    শনিবার রাজধানীর ‍কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্র ঋণ নয়, সরকারের পদক্ষেপের ফলেই দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে।

    বৃহস্পতিবার সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) এক অনুষ্ঠানে দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের প্রশংসা করেছিলেন মুহিত।

    তিনি বলেছিলেন, “একসময় এদেশে ৭০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র ছিল। সেখান থেকে এখন ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। গ্রামীণ ব্যাংক এ ভূমিকাটি সাফল্যের সঙ্গে পালন করেছে।”

    তার বক্তব্যের সূত্র ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “কয়েকদিন আগে আমাদের অর্থমন্ত্রী খুব মাইক্রোক্রেডিটের প্রশংসা করে বললেন যে ক্ষুদ্র ঋণের জন্য নাকি দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে।

    “ক্ষুদ্র ঋণে দারিদ্র্য লালন-পালন হয়। আর, যারা ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা করে তারা সম্পদশালী হয়। তারা ধনশালী হয়। কারণ, সপ্তাহে সপ্তাহে সুদ ওই গরিবের। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে টাকা কামাই করে, সেটা তার সুদ হিসাবে চলে যায়। কোনো মতে খেয়েপরে বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু দারিদ্র্যের হাত থেকে উঠে আসতে পারে না।”

    “আর, যারা এই ব্যবসা করে তারা চায়ও না এই দারিদ্র্য থেকে উঠে আসুক। কারণ, দারিদ্র্য থেকে উঠে আসলে, তাদের ব্যবসাই চলে যাবে। তারা কাকে নিয়ে আর ব্যবসা করবে?”

    দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশে নেমে আসার দিকে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তার জন্য যদি দারিদ্র্য বিমোচন হয়, তবে ৬০ শতাংশের মতো দরিদ্র থাকে কেন? আর, আজকে ২২ শতাংশে নেমে এসেছে কেন?”

    দারিদ্র্য বিমোচনে নিজের সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো নিজের সরকারের অর্থমন্ত্রীকে মনে করার তাগিদ দেন শেখ হাসিনা।

    “আমি মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে বলব, উনি একটু যাতে হিসাব নেন, এই যে ২২ ভাগে নেমে এসেছে, সেটা কাদের আমলে? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ.. যেটা মাননীয় অর্থমন্ত্রী এই কর্মসূচি নিয়েছেন।”

    সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন হয়ে অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে দিয়ে কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করায় দারিদ্র্য বিমোচন শুরু হয়েছিল বলেও শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন।

    গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করা নিয়েও মুহিতের সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা।

    শেখ হাসিনা বলেন, “আমার দুঃখ লাগে.. তিনি এমন একজনের প্রশংসা করে ফেললেন, যার কারণে আমার পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। বারবার আমাকে থ্রেট দেওয়া হয়েছিল আমেরিকা থেকে।

    “অথচ তিনি আবার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। যা হোক এটা তাদের চিন্তা ভাবনা।”

    http://bangla.bdnews24.com/economy/article1297686.bdnews

  2. সাক্ষাৎকার: অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস

    সরকার কাজে লাগাতে চাইলে সাড়া দেব

    বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষুদ্রঋণ, সামাজিক ব্যবসা ও তিন শূন্যের পৃথিবী ধারণার প্রবক্তা। এই অর্থনীতিবিদ প্রতিষ্ঠিত ‘গ্রামীণ ব্যাংক মডেল’ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় মুহাম্মদ ইউনূস স্বাধীনতার পর পরিকল্পনা কমিশনে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন; তত্ত্বাবধায়ক সরকারেরও উপদেষ্টা ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, যুক্তরাষ্ট্রের ভেন্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্ধশতাধিক সম্মানসূচক ডক্টরেটও পেয়েছেন। নোবেল ছাড়াও পেয়েছেন রামোন ম্যাগসেসে, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অনেক স্বীকৃতি। থ্রি ফারমার্স অব জোবরা, ব্যাংকার টু দ্য পুওর, ক্রিয়েটিং এ ওয়ার্ল্ড উইদাউট পোভার্টি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। মুহাম্মদ ইউনূসের জন্ম ১৯৪০ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে

    সমকাল: আমরা আনন্দিত যে, আপনি সাক্ষাৎকারের জন্য সময় দিয়েছেন। দেশীয় সংবাদমাধ্যমে আপনার সাক্ষাৎকার দেখা যায় না। এ ব্যাপারে সাংবাদিক মহলে আক্ষেপও রয়েছে।

    মুহাম্মদ ইউনূস: আমিও খুব খুশি যে আপনারা এসেছেন। আমি আসলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতেই চাই। কিন্তু সব ক্ষেত্রে সময়সূচি মেলে না। এ ছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, আমি বলি একভাবে, প্রকাশ হয় আরেকভাবে। তাতে করে ভুল বোঝাবুঝি বাড়ে। সুনির্দিষ্ট বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনার ক্ষেত্রে আমার কখনোই অসম্মতি নেই। 

    সমকাল: এই সাক্ষাৎকার এমন সময় নিচ্ছি, যখন আপনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একাধিক মামলার বিষয় দেশে-বিদেশে আলোচিত। বিরল কিছু স্থানে আপনার উপস্থিতিও লক্ষণীয়। যেমন গত ৩ মার্চ সকালে কাকরাইলে ও দুপুরে পুরান ঢাকায় জামিনের জন্য গিয়েছিলেন। এরই ফাঁকে জনসন রোডের একটি হোটেলে নাশতা করতে হয়েছে। কতদিন পর এভাবে জনপরিসরে গিয়ে আহার করলেন? 

    মুহাম্মদ ইউনূস: নাশতা করা যেমন তেমন, এভাবে আদালতে যাওয়ার বিষয়টিই আমার কাছে মনে হলো যেন দুঃস্বপ্নের মধ্যে আছি। দুঃস্বপ্ন এ জন্য, দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে আদালতে বিচারপ্রার্থী হতে হচ্ছে। শুধু আমি নই, সব মিলিয়ে আটজন এমন ব্যক্তিকে আদালতে যেতে হয়েছে, যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে সারাজীবন নিয়োজিত থেকেছেন দরিদ্র মানুষের উন্নয়নে। দরিদ্র মানুষের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখা ও বাস্তবায়ন ছাড়া তাদের জীবনে আর কোনো লক্ষ্যই ছিল না। 

    সমকাল: আমরা এভাবে বলতে পারি, স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি?

    মুহাম্মদ ইউনূস: একটা উদাহরণ দিই। সারাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত নারীর প্রায় সবারই অক্ষরজ্ঞান ছিল না। তাদের ও তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছিলাম আমরা। শুধু অক্ষরজ্ঞান ছিল না বা নাম লিখতে পারত না, এমন নয়। আমরা নাম জিজ্ঞেস করার আগপর্যন্ত অনেকে ছিল কারও মেয়ে, কারও স্ত্রী বা কারও মা। নিজের নাম লেখা শেখার পর তার যে আত্মবিশ্বাস, সেটা দেখার মতো। সেই যে শুরু হলো স্বপ্ন বাস্তবায়নের দীর্ঘ যাত্রা শেষে, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমাকে আদালতে দাঁড়াতে হচ্ছে। কীসের জন্য? জালিয়াতির অপরাধ, অর্থ আত্মসাতের অপরাধ, মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধে! আদালতে দাঁড়িয়ে পুরো বিষয়টি সিনেমার ফ্লাশব্যাকের মতো মনে হচ্ছিল। 

    সমকাল: বিষয়গুলো আপনার দৈনন্দিন জীবনযাপনে কতটা প্রভাব ফেলেছে?

    মুহাম্মদ ইউনূস: আমার স্ত্রী ডিমেনশিয়া রোগী। সে কিছুই বোঝে না, কাউকে চেনে না। আমাকেও চেনে না। শুধু জানে যে, এই ব্যক্তির ওপর আস্থা রাখা যায়। আমাকে দিয়েই সবকিছু করতে চায়। একটি মামলায় সাজা তো হয়েই গেছে। আমাকে যদি জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তাঁর কী অবস্থা হবে? আমার দুই মেয়ে; একজন বিদেশে, একজন দেশে। তারা বুঝতে পারছে না, আব্বা কেন জেলে যাবে? আমার একজন নাতি, ৮-৯ বছর বয়স। সে খুব ক্রিয়েটিভ শিশু। সুন্দর গান গায়, ইনস্ট্রুমেন্ট বাজায়, টেলিভিশনে শিশুদের অভিনয় করে। সে বুঝতে পারছে না, জেল কী জিনিস, নানা সেখানে কেন যাবে?

    সমকাল: মামলা হওয়ার পর বিশ্বের খ্যাতনামা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বিবৃতি দিয়েছেন, খোলা চিঠি লিখেছেন। এতে পরিস্থিতির কোনো গুণগত পরিবর্তন হয়েছে?

    মুহাম্মদ ইউনূস: মামলার পর দেশের সাধারণ মানুষও বিভ্রান্ত ছিল। আমি সারাদেশে গ্রামে গ্রামে গিয়েছি, সাধারণ মানুষের সঙ্গে বৈঠক করেছি, তাদের সন্তানদের লেখাপড়া, ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছি। তারা আমাকে নোবেল পুরস্কার পেতে দেখেছে। হঠাৎ কী হলো, তারা বুঝতে পারছে না। কিন্তু যখন বিবৃতিগুলো এসেছে, তারা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। কারণ পৃথিবীর সব মান্যগণ্য ব্যক্তি বলছেন, তিনি নির্দোষ। নিরপরাধ মানুষকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। ফলে শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়েই সাধারণ মানুষ স্বস্তি পেয়েছে। 

    সমকাল: শ্রম আইন লঙ্ঘন ও অর্থ আত্মসাৎ মামলা দুটির আইনি ভিত্তি নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?

    মুহাম্মদ ইউনূস: কোনো ভিত্তি আছে বলে আমার মনে হয় না। সবাই বলছে, এগুলো হয়রানিমূলক মামলা। অর্থ আত্মসাতের কোনো কারণই নেই। ব্যক্তিগতভাবে অর্থ উপার্জন আমার জীবনে কখনোই কাম্য ছিল না। কেন অর্থ আত্মসাৎ করতে যাব! কেন জালিয়াতির আশ্রয় নেব! গ্রামীণ ব্যাংকের জন্ম হয়েছে একটি শব্দের ভিত্তিতে– বিশ্বাস বা ট্রাস্ট। ক্রেডিট শব্দটির মূল অর্থ হলো ট্রাস্ট। কিন্তু পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে ডিসট্রাস্ট বা অবিশ্বাস দিয়ে। ঋণদাতা ঋণগ্রহীতাকে বিশ্বাস করে না। ফলে দলিল বা সম্পত্তি জিম্মি রাখতে হয়। গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে আমরা বিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছি, ঋণ পেতে দলিল বা সম্পত্তি জিম্মি রাখতে হবে না। বিশ্বাসের ভিত্তিতে শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে যাওয়া একটা প্রতিষ্ঠান কেন জালিয়াতির আশ্রয় নেবে?

    সমকাল: এখন আপনি জামিনে রয়েছেন। মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ কী?

    মুহাম্মদ ইউনূস: বিশ্বজুড়েই মামলা পর্যবেক্ষণ করে যেসব প্রতিষ্ঠান, এর একটি হলো আমাল ক্লুনি ফাউন্ডেশন। যে মামলার বিচার নিয়ে শঙ্কা জাগে, তারা সেখানে টিম পাঠিয়ে পর্যবেক্ষণ করে। তারা রিপোর্ট দিয়ে বলেছে, এই মামলা ডিসমিস করে দেওয়া উচিত। এখন যে মামলার ভিত্তিই নেই, সেখানে তো আর কিছু করার নেই। ধরে নিচ্ছি আমাদের হয়রানি চলতেই থাকবে।

    সমকাল: ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে গ্রামীণ টেলিকম ভবনে একদল মানুষ এসেছিল আপনার নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ‘দখল’ নিতে। এর নেপথ্যের বিষয়টি কী?

    মুহাম্মদ ইউনূস: দেখুন, গ্রামীণ ব্যাংকে যখন থাকতে পারলাম না, তখন আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বহু কষ্টে জমি জোগাড় করে এই ‘গ্রিন বিল্ডিং’ নির্মাণ করেছি। মাত্র দু’বছর হলো আমরা এখানে এসেছি। গত ১২ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ একদল লোক হইহই করে ঢুকে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করল। তারা বলল, গ্রামীণ ব্যাংক বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্তে আমরা এটি দখল নিতে এসেছি। ১৫ ফেব্রুয়ারি আমরা সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দিলাম। ওই দিন সকাল থেকে ভবনের বাইরে জমায়েত, রাজনৈতিক বক্তৃতা ও স্লোগান শুরু হলো। কিছু নারী ঝাড়ু নিয়ে এলেন। যা হোক, দেরিতে হলেও প্রেস কনফারেন্স করলাম। তার পর থেকে তারা আসা বন্ধ করেছেন। 

    সমকাল: গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকেও একটি সংবাদ সম্মেলন করে মালিকানা বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

    মুহাম্মদ ইউনূস: আমরা বলেছি, এটি নিয়ে বিতর্ক করার কিছু নেই, আইনিভাবে নিষ্পত্তি করতে হবে। মানুষ ঢুকিয়ে জবরদখল তো ন্যায়নীতির বিষয় হলো না! আমরা বলেছি, আদালতে যান, প্রমাণ করেন কীভাবে এটির মালিক হলেন। আমরাও বলি কীভাবে আমরা এটির মালিক।

    সমকাল: মালিকানার বিষয়টি তাহলে কীভাবে নির্ধারিত হবে?

    মুহাম্মদ ইউনূস: এসব প্রতিষ্ঠানের আসলে কোনো ব্যক্তিমালিকানা নেই। এগুলো কোম্পানি আইনে বিশেষ একটি ধারা সেকশন টোয়েন্টিএইট কোম্পানি। এ ধারা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির কোনো পুঁজি নেই। যে কয়েকজন মিলে কোম্পানি গঠন করেন, তাদের সর্বোচ্চ দায়ভার এক হাজার টাকা। কোম্পানির কোটি কোটি টাকা লোকসান হলেও এক হাজার টাকার বেশি তার দায় নেই। ধারাটি আমরা পছন্দ করেছি, কারণ এটি সামাজিক ব্যবসা ধারণার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এ ব্যবসা থেকে মালিক কোনো মুনাফা নেবেন না।

    সমকাল: বিশ্বজুড়ে সামাজিক ব্যবসা মডেল ও তিন শূন্যের পৃথিবী নিয়ে আপনার স্বপ্নের বাস্তবায়ন কি দেশীয় আইনি ঝামেলায় বাধাগ্রস্ত হতে পারে?

    মুহাম্মদ ইউনূস: আমরা তো সৎভাবে শুরু করেছিলাম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর প্রসার হচ্ছে। নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার খোলা হচ্ছে। প্যারিসে সোশ্যাল বিজনেস অলিম্পিক হতে যাচ্ছে। এখন একটু থমকে যেতে পারে।

    সমকাল: আপনার তিন শূন্যের পৃথিবীতে শূন্য কার্বন নির্গমনের ধারণা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে প্রথম সারিতে থাকা বাংলাদেশের জন্য সেটা গুরুত্বপূর্ণ।

    মুহাম্মদ ইউনূস: গোটা বিশ্বের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গ্লোবাল ওয়ার্মিং আমাদের জন্য আশু সমস্যা। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, আমরা সবার আগে তলিয়ে যেতে পারি। এ জন্য আমরা ‘থ্রি জিরো ক্লাব’ গঠন করে দিচ্ছি। বলছি, পাঁচজন মিলে একটি গ্রুপ হবে– যাদের বয়স ১২ থেকে ৩৫ বছর। তাদের উদ্দেশ্য হলো জিরো কার্বন এমিশন, জিরো ওয়েলথ কনসেন্ট্রেশন, জিরো আনএমপ্লয়মেন্ট। এ ধরনের একটি বিশ্ব নিজে নিজে হবে না, তরুণদের নিজেদের গড়তে হবে। আমাদের হয়রানি অব্যাহত থাকলে তিন শূন্যের পৃথিবী গড়ার কার্যক্রম থমকে যেতে পারে।

    সমকাল: বর্তমান সরকারের সঙ্গে দূরত্বের কারণেই কি আপনার কার্যক্রম নিয়ে জটিলতা বাড়ছে? 

    মুহাম্মদ ইউনূস: দূরত্ব বললে কথাটা খুব হালকা হয়ে যায়। আমার নাম না ধরে ‘রক্তচোষা’ বলা হয়। আমাকে পদ্মায় চোবানোর কথা বলা হয়। এমন ক্ষোভের কারণ আমার জানা নেই। কথায় বা আচরণে এমন কিছু করিনি যে সরকারের কেউ আমার ওপর ক্ষুব্ধ হতে পারেন। 

    সমকাল: বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের। আপনিও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের পরিকল্পনা কমিশনেও যোগ দিয়েছিলেন।

    মুহাম্মদ ইউনূস: আমরা বোধ হয় বিশ্বে প্রথম বাংলাদেশ সিটিজেনস কমিটি বলে একটি কমিটি করেছিলাম। যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি স্টেটের ন্যাশভিলে আমরা পূর্ববঙ্গের ছয়জন ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর খবর টেলিভিশনে দেখেই আমরা ঘোষণা করলাম– আমরা আর পাকিস্তানি নাগরিক নই। আমরা বাংলাদেশি নাগরিক। ন্যাশভিলে যত টেলিভিশন স্টেশন ছিল, সেখানে গিয়ে ইন্টারভিউ দিয়েছি। যাতে সবাই জানতে পারে, বাংলাদেশি নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রেও অবস্থান নিয়েছে।

    সমকাল: একটি নিউজলেটারও প্রকাশ করেছিলেন।

    মুহাম্মদ ইউনূস: আমার বাসা থেকেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নিউজলেটার প্রকাশ হতো। আমার স্ত্রী টাইপ করতেন, আর আমি গ্যাস্টেটনার সাইক্লোস্টাইল মেশিন ঘুরিয়ে সেই নিউজলেটার কপি করতাম। নিউজলেটারের জন্য আমি নিজে কার্টুন আঁকতাম। তারপর সেই নিউজলেটার আমি বিতরণ করতাম। সেখানে আমার নাম ও বাসার ঠিকানা ছিল। ফলে পাকিস্তানিরা বাসার সামনে এসে আমাকে ‘গাদ্দার’ বলে গালাগাল করত। 

    সমকাল: কেবল মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি হিসেবে নয়; আওয়ামী লীগ সরকারও দারিদ্র্য বিমোচনের কথা বলে, নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলে, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার কথা বলে। তাহলে দূরত্বের ইস্যু কী?

    মুহাম্মদ ইউনূস: আমি বুঝি না। আপনারা সাংবাদিকরা ভালো বলতে পারবেন।

    সমকাল: বর্তমান সরকারপ্রধানের সঙ্গে একসময় আপনার সুসম্পর্কই আমরা দেখেছি। ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আপনার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মাইক্রোক্রেডিট সম্মেলনে তিনি কো-চেয়ার ছিলেন। গ্রামীণফোনের অনুমোদনও পেয়েছিলেন শেখ হাসিনার প্রথম প্রধানমন্ত্রিত্বকালে। 

    মুহাম্মদ ইউনূস: ঠিকই বলেছেন। তাঁর সঙ্গে আমার সুসম্পর্কই ছিল। সেটা কোন দিক থেকে হারিয়ে গেল, জানি না। আমি কী অপরাধ করেছি, তাও জানি না।

    সমকাল: আপনি নিজে কখনও দূরত্ব বা বিরোধের সম্ভাব্য সূত্র নিয়ে ভেবে দেখেছেন?

    মুহাম্মদ ইউনূস: আমাকে তো ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়া হলো। বলা হলো, আমার বয়স বেশি হয়ে গেছে। আমরা বললাম, আমরা তো সরকারি ব্যাংকের আইন মানি না। আমরা তো বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলি। বলা হলো, সরকারি ব্যাংকের আইনই মানতে হবে। আমি পদত্যাগ করে চলে এলাম। এটুকুই তিক্ততার জায়গা ছিল। এর বাইরে আর কোনো ঘটনা তো নেই!

    সমকাল: বহুল আলোচিত ওয়ান-ইলেভেনের পর ‘নাগরিক শক্তি’ নামে রাজনৈতিক দল গঠনের ঘটনাটি কি তাহলে মূল কারণ?

    মুহাম্মদ ইউনূস: আমি সেটাকে কারণ হিসেবে মনে করি না। কারণ যে কোনো নাগরিকই তো রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে। এটা তো সাংবিধানিক অধিকার। যে কেউ রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে। আপনারা দীর্ঘদিনের বিশাল রাজনৈতিক দল। একটা লোক কোথা থেকে এসে বলল, রাজনৈতিক দল গঠন করবে। করবে বলেছে, করেওনি। তাতেই ক্ষুব্ধ হওয়ার কী আছে?

    সমকাল: মনে হতে পারে, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নাজুক সময়ে আপনি ক্ষমতার সুযোগ নিতে চেয়েছিলেন।

    মুহাম্মদ ইউনূস: সে সময়ের সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব আমাকে বলেছিল সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। বারবার বলেছিল, চাপ দিয়েছিল। বাসায় এসে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বসে থেকে জেনারেলরা আমাকে বুঝিয়েছেন, চাপ দিয়েছেন, তর্ক-বিতর্ক করেছেন, ভয় দেখিয়েছেন। আমি রাজি হইনি। বলেছি, আমি এই দায়িত্ব গ্রহণ করব না। আমার পেছনে সময় নষ্ট না করে অন্য লোক খুঁজে বের করেন। সুতরাং আমাকে তো ক্ষমতা সাধা হয়েছে! যদি ক্ষমতার খায়েশ থাকতই, তাহলে এত কষ্ট করে রাজনৈতিক দল গঠন করার দরকার ছিল না। ক্ষমতার লোভ থাকলে আমি সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেই রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারতাম। ক্ষমতা আছে, সামরিক বাহিনী আছে পেছনে, আর কী চাই? আমি তো সেই পথে যাইনি। দৃঢ়ভাবে ক্ষমতা থেকে দূরে থেকেছি। এমন নয় যে আরেকবার সাধিলে খাইব। 

    সমকাল: অভিযোগ করা হয়, ওয়ান-ইলেভেনকালে ‘মাইনাস টু’ তত্ত্বের নেপথ্যে আপনার হাত রয়েছে।

    মুহাম্মদ ইউনূস: ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরা তো আমার ওপর নারাজ ছিল। কারণ তাদের কথামতো সরকারপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করিনি। তাদের কথা শুনছি না, আবার তারা আমার কাছেই পরামর্শের জন্য আসবে? একটা অভিযোগ প্রচার করে দিলেই সত্য হয় না। ভিত্তিহীন কথার তো কোনো জবাবও হয় না।

    সমকাল: পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার ব্যাপারেও আপনাকে দায়ী করা হয়।

    মুহাম্মদ ইউনূস: বিষয়টি হলো, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হওয়ার আলোচনা চলছিল অনেক দিন ধরে। তখনকার পত্রপত্রিকায় লেখা হচ্ছিল। তখনকার অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত তাদের আশ্বস্ত করছেন যে দুর্নীতি হবে না। বিশ্বব্যাংক একটি তালিকা দিয়ে বলেছিল, এই কয়জনকে বিদায় করে দিতে হবে। মুহিত সাহেব রাজিও হয়ে গিয়েছিলেন, কয়েকজনকে সরিয়েও দিয়েছিলেন। কিন্তু যখন যোগাযোগমন্ত্রীর প্রশ্ন এলো, তখন বিষয়টি আটকে গেল। এই তো ঘটনাচক্র! মাঝখানে কেউ একজন হিলারি ক্লিনটনকে ফোন করলেন, হিলারি বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টকে ফোন করলেন, টাকা বন্ধ হয়ে গেল! বিষয়টি এতটাই সহজ!

    সমকাল: আপনার কি মনে হয়, অতীতের সুসম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এখনও বর্তমানে সরকারের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনা সম্ভব?

    মুহাম্মদ ইউনূস: অবশ্যই সম্ভব। সরকারের সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ তো নেই!

    সমকাল: দূরত্ব কমিয়ে আনার জন্য দেশের ভেতরে বা বাইরে থেকে কোনো উদ্যোগ কি কখনও নেওয়া হয়েছে?

    মুহাম্মদ ইউনূস: যখন আমাকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়া হয়, সে সময় অনেকে চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন দেশ থেকে উচ্চপদস্থ অনেকে এসেছেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী বা বিশেষ দূতরা এসেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। 

    সমকাল: এ সময়ে এসেও আপনার কন্যা মণিকা ইউনূস সিএনএনে বলেছেন যে, তিনি চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আপনি আবারও একসঙ্গে কাজ করুন।

    মুহাম্মদ ইউনূস: সবাই মিলে দেশের জন্য কাজ করতে পারলে তো ভালো। দূরত্ব না থাকলেই হলো! যেহেতু তিনি প্রধানমন্ত্রী, একটা কথা বললে সারাদেশের মানুষ সেটা মান্য করেন। তিনি যখন কাউকে ‘চোর’ বলেন, তখন সারাদেশের মানুষ বিভ্রান্ত হয়।     

    সমকাল: অধ্যাপক রেহমান সোবহান এই জানুয়ারিতেও সংবাদপত্রে লিখেছেন, জাতির সম্পদ হিসেবে বৈশ্বিক পরিসরে আপনাকে কাজে লাগাতে পারে সরকার। যদি কখনও এমন আহ্বান আসে, আপনি সাড়া দেবেন?

    মুহাম্মদ ইউনূস: অবশ্যই সাড়া দেব। দেশের জন্য কাজ করা তো বড় ব্যাপার। দেশের সবাই যাতে উপকৃত হয়, এটাই তো আমাদের কাজ! মানুষের উপকার করা ছাড়া সারাজীবন আর কিছুই তো করিনি। 

    সমকাল: নবম গ্লোবাল সোশ্যাল বিজনেস সামিটের একটি দৃশ্য চোখে ভাসে। আপনার ডাক পেয়ে দৌহিত্র সাইরাস দৌড়ে যাচ্ছে মঞ্চের দিকে। ৮৩ বছর বয়সে এসে এমন অখণ্ড পারিবারিক পরিসরের কথা কি ভাবেন?

    মুহাম্মদ ইউনূস: এ ধরনের পারিবারিক সময় নিশ্চয়ই আনন্দদায়ক। নাতি সাইরাসকে আমি অনন্ত বলে ডাকি। আমার মেয়েদের সঙ্গেও সময় কাটাতে ভালো লাগে। কিন্তু কাজে মগ্ন থাকাতেও আমার আনন্দ। কাজ আমাকে সতেজ করে।

    সমকাল: আপনার সহজ ও সতেজ জীবন আমরাও কামনা করি। এত ব্যস্ততার মধ্যেও অনেক সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

    মুহাম্মদ ইউনূস: সমকাল ও আপনাদের ধন্যবাদ।

  3. আইনের শাসন বলে যে একটা জিনিস, সেটা আমরা পাচ্ছি না: ইউনূস

    শ্রম আইনের মামলায় দণ্ডিত নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে এসে ‘আইনের শাসন’ না পাওয়ার কথা বলে আক্ষেপ করেছেন।

    সাংবদিকদের তিনি বলেছেন, “আমার মাঝে মাঝে দুঃখ হয় এটা নিয়ে, সারা দুনিয়া বাংলাদেশ থেকে (ক্ষুদ্রঋণ) শিখতে চায়। আমাদের গৌরব বোধ করার কথা। তা না করে আমরা এমন কাজ করছি, যেন একটা পাপের কাজ করে ফেলেছি আমরা। এমন অনুভূতি হওয়ার তো কোনো কারণ ছিল না।”

    গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় মঙ্গলবার ঢাকার জজ আদালতে হাজিরা দেন ওই কোম্পানির চেয়ারম্যান ইউনূস।

    ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ মামলায় দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে মামলাটি বিশেষ জজ আদালত-৪ এ পাঠিয়ে দেন।

    গত ১ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ইউনূসসহ চার জনকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার একটি শ্রম আদালত। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের টাকা আত্মসাতের মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

    ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টাকে ‘শান্তি স্থাপন’ বিবেচনা করে ২০০৬ সালে ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংককে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। সরকারের অর্থায়ন ও সহযোগিতায় গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইউনূস এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

    ২০১১ সালে অবসরের বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ায় তার পদে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই বছর মার্চে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ইউনূসকে অব্যাহতি দেয়, তখন তার বয়স প্রায় ৭১।

    ইউনূস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে যান এবং দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর আপিল বিভাগের আদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃত্ব হারান।

    দেশে ও বিদেশে বাম ধারার অনেক বুদ্ধিজীবী দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষুদ্র ঋণের বিরুদ্ধে বলে আসছেন। তাদের মতে, দারিদ্র্য বিমোচনে এই ঋণের ভূমিকা প্রমাণিত নয়। তবে ইউনূস বলছেন, ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থার জন্য জাতি হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ ‘গর্ব’ করতে পারে। 

    তার ভাষায়, “সারা দুনিয়ার সামনে এমন সব জিনিস নিয়ে এসেছি, তারা আমাদের কাছ থেকে জানার জন্য, বোঝার জন্য সেটা তাদের দেশে করার জন্য; সেটা উন্নত দেশ হোক, সেটা অনুন্নত দেশ হোক– কোনো পার্থক্য নেই। সবাই চায় আমাদের কাছ থেকে শিখতে। যে জিনিস সারা দুনিয়া শিখতে চায়, তাদেরকে তো আমরা বাধ্য করছি না! উৎসাহ নিয়ে তারা আসছে। সেই সুযোগটা আমরা দেব।”

    ইউনূস তার ‘সামাজিক ব্যবসা’ ধারণার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, “মানুষ বিশ্বাস করে এটাতে, তারা এটাতে এগিয়ে এসেছে। দেশ-বিদেশের মানুষ এটাতে বিশ্বাস করছে। যে কারণে তারা উৎসাহিত হয়ে সারা দুনিয়ার থেকে এটা করার জন্য যেটাকে আমরা সামাজিক ব্যবসা বলছি। কী জিনিস, কী ব্যাপার, এটা কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আমরা হাজির করি নাই।

    “তাদের মনে হয়েছে, এতে মানুষের মঙ্গল হবে। মানুষের মঙ্গলের জন্য আমরা করি। সেই জন্য দেশ-বিদেশের নেতারা এটা জানতে চায়, বুঝতে চায়, কর্মীরা বুঝতে চায়, দেশে প্রয়োগ করতে চায়। সেই জন্য নানা দেশে যাই। এই যে নানা দেশে যেতে হয়, এটা শুধু নিজের স্ফূর্তির জন্য যাওয়া তো না, এটা তাদের নেহাত আগ্রহ, যেহেতু তারা করছেন।”

    সাংবাদিকদের উদ্দেশে ইউনূস বলেন, “আপনাদের কাছে এটাই অনুরোধ, দেশের মানুষের কাছেও জিজ্ঞেস করেন, আমরা সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারছি না কেন? কোথায় বাধা আমাদের? সেই জিনিসটা জানার জন্য। আমরা যেহেতু এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পেরেছি যে, মানুষ আমাদের কাছে শিখতে চায়। দেশ-বিদেশে, সারা দুনিয়ার এই মাথা থেকে ওই মাথা পর্যন্ত শিখতে চায় এবং সেটাতে তাদের জাতির মঙ্গল হচ্ছে বলে তারা মনে করে।

    “আমরা বলছি যে, বর্তমানে যেভাবে আমরা অগ্রসর হচ্ছি, সারা দুনিয়া অগ্রসর হচ্ছে। তাতে দুনিয়া সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে, শেষ হয়ে যাবে। বিনষ্ট হয়ে যাবে। সেটা থেকে উদ্ধারের একটা রাস্তা আমরা তৈরি করছি। সেই জন্য মানুষের এত আগ্রহ। তারা বিশ্বাস করছেন যে, এই রাস্তা করলে সারা দুনিয়া উদ্ধার পাবে। যে জন্য আমরা তিন শূন্যের পৃথিবীর কথা বলে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে কী, একটা তিন শূন্য, কিন্তু মানুষ মনে করছে এটাতেই আমাদের মুক্তি। কাজেই মুক্তির পথ হিসেবে তারা মনে করছে।”

    ইউনূস বলেন, “দুনিয়াতে পুঁজিবাদের কথা হয়েছে, কমিউনিজমের কথা হয়েছে, হচ্ছে, এখনো হচ্ছে। আমরা তো ওই রকম কোনো মতবাদ প্রচার করছি না! আমি শুধু বলছি, আপনি ইচ্ছা করলেই কাজটা করতে পারেন। করলে দুনিয়ার মঙ্গল হবে। আমরা এই বালা-মুসিবত থেকে– পৃথিবীর যে বালা মুসিবত, আমি তো নিজের বালা-মুসিবতের কথা বললাম, দেশের বালা-মুসিবতের কথা বললাম, পৃথিবীর একটা বালা-মুসিবত আমাদের চারদিকে ঘিরে আছে, সেই বালা-মুসিবত থেকেও আমাদের উদ্ধার করতে হবে। এবং সেটা করার পথে আমরা কিছুটা আলোর নির্দেশনা দিতে পারছি যে, এই পথে গেলে আমরা সেই মুক্তিটা পাব। সেই পথে অগ্রসর হচ্ছি। কিন্তু পদে পদে আমরা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছি।”

    বাধাপ্রাপ্ত কেন হচ্ছেন? সাংবাদিকরা এ প্রশ্ন করলে ইউনূস বলেন, “সেটা আপনারা বিচার করেন। আমরা কী ব্যাখ্যা দেব বলেন।”

    দেশের বালা-মুসিবত কী, সেই প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “আপনারা তো রোজ লিখছেন সেটা। কী– সেটা আমাকে বলতে বলছেন কেন? বালা মুসিবত হচ্ছে মানুষ যেভাবে বাঁচতে চায়, যেভাবে থাকতে চায়, সেভাবে থাকতে পারছে না। আইনের শাসন বলে যে একটা জিনিস, সেটা আমরা পাচ্ছি না কোথাও। রোজ আপনারা লিখছেন সেগুলো, আমরা আপনাদের কাছ থেকে তো শিখছি, বুঝে নিচ্ছি।”

    ইউনূস নিজে কী দেখছেন, সেই প্রশ্ন সাংবদিকরা রেখেছিলেন। উত্তরে ইউনূস বলেন, “আপনারা যেভাবে দেখছেন, আমিও সেভাবে দেখছি। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে দেখছি। আপনিও দেশের নাগরিক হিসেবে দেখেন। আমরা তো দেশের অংশীদার। আমরা সবাই মিলেই তো এ দেশ।”

    আইনের শাসন কোথায় নেই, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে দণ্ডিত এই নোবেলবিজীয় বলেন, “এটা আপনি পাতা উল্টে উল্টে লিস্ট করেন, আমি বলে দেব। অসুবিধা নেই তো। এগুলো আপনারা দেখবেন।”

    সাংবাদিকরা তখন ইউনূসের মুখ থেকেই বিষয়গুলো জানতে চান। উত্তরে তিনি বলেন, “আমি কাগজের বস্তাটা আপনার হাতে তুলে দেই। এগুলো বক্তৃতা করে তো কোনো লাভ নেই!”

    ইউনূস বলেন, “আমার অনুরোধ, এই রমজান মাসে আমরা সবাই মিলে নিজেদের দিকে তাকাই। আমরা নিজ নিজ ভূমিকা পালন করতে পারছি কি না? আমরা যেটা করতে চাচ্ছিলাম, সেটা করতে পারছি কি না? না করতে পারলে কীভাবে আমরা প্রতিবাদ জানাব। কীভাবে আমাদের কথাগুলো আমরা শোনাতে পারব, সেই শোনাবার পথ আমরা বের করি। পথ আমাদের বের করতেই হবে। এটা ছাড়া কোনো উপায় নেই।”

    গত ৩ মার্চ আত্মসাতের এ মামলায় জামিন পাওয়ার পর আদালত থেকে বেরিয়ে ইউনূস সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তারা যেন তার ছবি তুলে তা সংগ্রহ করে রাখেন, কারণ তার ধারণা, ছবিটি ‘ঐতিহাসিক’ হয়ে যাবে।

    সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে একজন সাংবাদিক বলেন, জজ আদালত অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছে। এখানে ইউনূস ন্যায়বিচার পাচ্ছেন কি না।

    জবাবে ইউনূস বলেন, এখনো তো বিচার শুরু হয়নি।

    “আমি যে কথাটা আগে বলেছি, আবারও বলছি, এইটার থেকে আপনিও মুক্তি পাবেন না, দেশের কোনো মানুষ মুক্তি পাবে না। এটার কথা বলতে হবে, আমার কী ভূমিকা ছিল সেখানে? এই যে উনার হেনস্তাটা হলো, আমি কি হেনস্তা মনে করেছিলাম? আমি কি প্রতিবাদ করেছিলাম? যদি মানুষ হেনস্তা মনে করে থাকে। আর যদি মনেই করে থাকে যে হেনস্তা হয়নি, তাহলে তো ভিন্ন কথা। কিন্তু এর জবাব সবাইকে দিতে হবে একদিন।”

Leave a reply to urumurum Cancel reply